সুইস ব্যাংকে মানুষ কেন টাকা রাখে?
২০২১ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশীদের ডিপোজিট ছিল ৮৭১.১ মিলিয়ন Swiss Frank টাকার হিসেবে যেটা হয় ৮,২৭৬ কোটি টাকা যেটা ২০২০ সালের চেয়ে ৫৫ শতাংশ বেশি। ইন্ডিয়ান sub-continent এই ডিপোজিটের হিসেবে বাংলাদেশ সেকেন্ড এবং Growth এর হিসেবে ফাস্ট। Swiss Bank এ তাদের দেশের বাইরে থেকে এত পরিমাণে টাকা আসে যে তাদের ন্যাশনাল জিডিপি 10 শতাংশ আসে এই ফিনান্সিয়াল সেক্টর থেকে। তাহলে ভাবেন কি পরিমাণ এর টাকা Swiss Bank এ যায়। কিন্তু কেন বিশেষ বড়লোক মানুষ Swiss Bank এ টাকা রাখতে চায়? তাদের নিজের দেশের ব্যাংকে টাকা রাখলে সমস্যা টা কোথায়? কি এমন সুবিধা দিচ্ছে Swiss Bank যা তাদের নিজেদের দেশের ব্যাংক গুলো দিচ্ছে না আর এই সুইস ব্যাংক টা কি? এবং কেন এটা এত জনপ্রিয় Millionaire Billionaire এর মধ্যে ?
ইনহেরিটেন্স এর ওপরে যখন টেক্স আসা শুরু করে তখন বড়লোকরা একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায়। টাকা যতবেশি দেখাবেন ততবেশি আপনাকে ট্যাক্স দেওয়া লাগবে। তাহলে এখন উপায় কি? ঐ যে সুইস ব্যাংকে চলে যান।
সুইস ব্যাংকের গোপনীয়তা :
সুইস ব্যাংকে যদি টাকা রাখেন তাহলে তারা তাদের সবচেয়ে বড় জিনিসটা আপনাকে দেবে সেটা হলো গোপনীয়তা। আর এ গোপনীয়তায় দিচ্ছিল সুইস ব্যাংক। ১৯৩২ সালের আগে সুইস ব্যাংক ছিল সব বড়লোকদের টাকা লুকানোর বেস্ট জায়গা কারণ ১৭১৩ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে সুইস ব্যাংকের নিয়ম ছিল কে টাকা রাখছে কত রাখছে তার কোনো তথ্যই পাবলিকের কাছে শেয়ার করবে না। তারা ইনফো যদি শেয়ার না করে পাবলিকলি না জানে তাহলে ট্যাক্স তো দেওয়া লাগছে না। এই জন্য তখনকার সেই ফ্রান্স সরকার প্রচন্ড রেগে গেছিল। তারা তখন রেড করে সুইস ব্যাংক গুলোতে এই রেডে বিশপ থেকে শুরু করে আর্মি জেনারেল ফর্মার মিনিস্টার এমন অনেক হাইপ্রোফাইল মানুষের করফকির ইনফো বের হয়ে আসে এই কাজ করাতে সুইস ব্যাংকের কমিউনিটি অনেক বেশি রেগে যায়। এই স্ক্যান্ডাল টা হওয়ার পরই সুইস ব্যাংকের নতুন একটা law আসে এই law হিসেবে ক্লায়েন্টের যেকোনো ধরনের ইনফরমেশন যদি কোনো ব্যাংকার ফাঁস করে দেয় যে কোন ধরনের ইনফরমেশন তাহলে সেই ব্যাংকারদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে আনলেস ক্লায়েন্ট যদি কোন অপরাধ করে থাকে। অবশেষে 1934 সালে পলিটিশিয়ানরা Duty Of Absolutely Silence Law করতে একমত হোন।
এর ফলে ক্লায়েন্টের ব্যাংকিং তথ্য বিশেষ করে বিদেশি কর্তৃপক্ষের সাথে শেয়ার করা অপরাধ হিসেবে ধরা হয়। সুইস ব্যাংকে কারো কোনো হিসাব আছে কিনা এই ব্যাপারে ওইখানকার ব্যাংকাররা কোন ভাবে তাদের মুখ খুলবেনা। আর যদি খুলে ফেলে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেস করতে পারবেন। আপনার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই ব্যাংকের সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল এবং ৫০০০০ সুইস ফ্রাঙ্ক পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তবে সুইস ব্যাংক এসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটের মতে ডিভোর্সের মামলা কর ফাঁকি বা মানিলন্ডারিং মামলায় অপরাধী প্রমাণিত হলে তার সম্পদের তথ্য প্রকাশ করা যেতে পারে। কিন্তু যে টাকাটা সুইস ব্যাংকে ঢুকছে তারা কিভাবে বুঝবে সেটা লিগ্যাল নাকি ইলিগ্যাল। বিদেশি কোন এজেন্সি চাইলেই কি তারা ইনফো দিয়ে দিবে! না দিবেনা। সুইস ব্যাংকের জমে থাকা যে টাকাটা এইটার লিগ্যাল judgement তখনই হবে যখন সুইস কোনো ব্যাংকার সেটা চেক করার অনুমতি দিবে।
যদি কোন সুইচ ব্যাংক এজেন্ট সন্দেহ করে যে তাদের ক্লায়েন্ট তিন লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক এর বেশি অর্থের ট্যাক্স এর হিসাব দিতে পারছে না তাহলে তারা ঐ ক্লাইন্টের মানি সোর্চ চেক করবে। তার মানে আজকে যদি আপনি কর ফাঁকি দিয়ে সুইস ব্যাংকে টাকা রাখেন তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট নিয়ে কথা উঠবে তখনি যখন আপনার এজেন্ট সন্দেহ করবে। আমি সরাসরি না বলি বুঝতেই পারছেন আপনারা শর্সের মধ্যে ভূতটা কয়। তবে ক্লায়েন্টের গোপনীয়তা রক্ষা করলেও সুইস ব্যাংকের বিরুদ্ধে কিন্তু বিভিন্ন ক্রাইমের Delegation আছে যেমন ২০১৪ সালে ক্রেডিট Swiss আমেরিকানদের মিথ্যা ট্যাক্স রিটার্ন এর দলিল করতে সাহায্য করে এর জন্য পরে তাদেরকে জরিমানা করা হয় প্রায় ২.৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এরপরও কিন্তু তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার লুকাচ্ছিল। সুইস ব্যাংক এরই এক ফর্মার ব্যাংক অফিশিয়াল আর এক লয়ার এইটা নিয়ে একটা Law Suit ফাইল করে যদিও ক্রেডিট Swiss নিয়ে চলা Ongoing আরেকটি Investigation ইন্টারফেয়ার করতে পারে বলে এই Law টাকে ডিসমিস করে দেয়া হয়। এনআরবি'র একটা রিপোর্টে জানা যায় বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকির জন্য হারায় আর আমেরিকাতে প্রতি বছরে ২১ বিলিয়ন ডলার কর ফাঁকি দিয়ে অন্য দেশে চলে যায়।
সুইস ব্যাংকারএসোসিয়েশন সবসময় বলে আসছে যে তারা আর এরকম কাজের সাথে নাই তারা বলে যে তারা সব ইন্টারন্যাশনাল রেগুলেশন মেইনটেইন করছে কিন্তু তারপরেও কিন্তু সুইস ব্যাংকে অনবরত টাকা আসতেই চলেছে। আর এর ইম্প্যাক্ট ফেস করছে গরিব দেশগুলো। TJN বা Tax Justice Network এর হিসেবে সুইস ব্যাংকে প্রতি বছর টেক্স ফ্রড এর কারণে যে পরিমাণ অর্থ আছে সেটা প্রায় ২১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এইযে বিজনেস পলিসিটা সুইস ব্যাংক একটা অনেক বড় সাকসেস নিয়ে আসছে। এই অর্থ তারা তাদের দেশের বড় বড় প্রজেক্ট ইনভেস্ট করে নিজেদের উন্নতি করে। নোবেল বিজয়ী ইকনোমিস্ট JOSEPH STIGLITZ তিনি মনে করেন এই পলিসি কিন্তু সুইস ব্যাংক কখনোই ছাড়তে চাইবে না। দুর্নীতিবাজ মানুষগুলো কিন্তু চাইবেই তাদের এত্ত এত্ত সম্পত্তিগুলোকে লুকিয়ে রাখতে। তারা টেক্স ফাঁকি দিতেই থাকবে আর সুইস ব্যাংক সেটার উপরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করবে। ২০১৪ সালে Organization For Economic Co-operation and Development পুরো বিশ্বজুড়ে Tax Authority এর সাথে ফাইনান্সিয়াল একাউন্টগুলোর ইনফর্মেশন লিঙ্ক করার জন্য অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অফ ইনফর্মেশন এর আন্ডারে কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড বা সিআরএস নামে একটা স্ট্যান্ডার্ড ডেভেলপ করে এবং সুইস ব্যাংক এর সাথে Agree করে। এর মধ্য দিয়ে তাদের এই কন্ট্রাক্টের এগ্রি করা ১০০ দেশের যে কেউ সুইস ব্যাংক একাউন্ট হোল্ডা করলে যদি সরকার চাই যে রিকুয়েস্ট করবে তাদের ইনফরমেশন নেওয়ার জন্য তাহলে সুইস ব্যাংক সেটা তাদেরকে দিতে বাধ্য হবে।
সত্যি খুব মজা লাগতেছে না ভালো লাগতেছে না শুনতে। কিন্তু সুইস ব্যাংক প্রচন্ড চালাক ওরা তো একদিন দুদিন ধরে করতেছে না ওরা শত শত বছর ধরে এটা করতেছে তাদের এই স্ট্র্যাটেজি তাকে বলা হয় জেব্রা স্ট্রাটেজি। একদিকে তারা কি করছে কাজ চালাচ্ছে এভরিথিং ইজ গুড অন্যদিকে থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি গরিব গরিব দেশ থেকে যেখানে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া হচ্ছে এবং কালো টাকাগুলো এখানে আসতেছে এবং এগুলোর কোনো হিসাব তারা দিচ্ছে না।
আপনারা জানেন যে থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি তে দুর্নীতিটা একটু বেশি হয়। আর দেশে দুর্নীতির যদি থাকে তাহলে এই টাকার যে হিসাব চাইবে এটার তো কোন লোক নাই কেউ তো টাকা চাইবে না সবাই তো দুর্নীতি করছে। উন্নত দেশগুলোর সামনে তারা একটু ভদ্র কিন্তু তাদের আগের যে বিজনেস মডেল সেটা কিন্তু চলছে। বাংলাদেশ থেকেও খুব ভালো Amount যায় সুইস ব্যাংকে। কিন্তু রিসেন্টলি বাংলাদেশের গভর্নর ফজলে কবীর বলেন বাংলাদেশ থেকে সুইস ব্যাংকে যে টাকা যায় তার ৯৫ শতাংশ পাচার হওয়া টাকা না বরং অন্যান্য কান্ট্রি থেকে যারা বাংলাদেশে থাকে তাদের জমা করা টাকা তিনি আরো বলেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাচার হয়ে টাকা গিয়েছে এমন কোন তথ্য আসেনি মানে এই হিসেবে পাচার হওয়া টাকার এমাউন্ট একবারে নাই বললেই চলে। এই ব্যাপারে ঢাকার বেশ কিছু এক্সপার্ট এর সাথে কথা বলে এবং তারাও এ কথাটা কে সাপোর্ট করে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ কিছুটা আফছোস নিয়েই বলেন এই টাকাটা যদি আমাদের দেশের ব্যাংকে রাখা হতো তাহলে কতই না লাভ হইত দেশে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন টাকা রাখা হচ্ছে না? এখানে কি সুইচ ব্যাংকের ঐ গোপনীয়তার লাভটা সবাই নিচ্ছে এরকম কিছু কি? টাকা যদি লিগাল হয় তাহলে এত গোপনীয়তার দরকার কি? অনেক এক্সপার্ট বলছেন এসব প্রশ্নের উত্তর অ্যানসার যদি আপনি খুঁজতে চান সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উচিত SNB (Swiss National Bank) এর সাথে প্রপার চ্যানেল অ্যাপ্রচ করা এবং ইনফো গুলা কালেক্ট করা। কিন্তু শুধু এইটাই এনাফ হবে না Policy Research Institute এর একজন সিনিয়র ইকোনোমিস্ট আশিকুর রহমান এর মতে আমাদের শুরুতে নজর দিতে হবে LC বা Letter Of Credit থ্রোতে যেসব ট্রানজেকশন হচ্ছে সেগুলোর দিকে। এবং যেগুলো কান্ট্রি হচ্ছে Tax Seven যেমন বারমুডা বা সুইজারল্যান্ডের যেসব কান্ট্রিতে বড় এমাউন্টের টাকা পয়সার ট্রান্সফার হওয়ার সময় সেটাকে Servelance এ আনতে হবে। আর এইসব কিছু করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কে আরো বেশি একটিভ হতে হবে সুইস ব্যাংক সিকিউরিটি দিচ্ছে খুব ভালো কথা কিন্তু তারা তো বেশ থেকে সব টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে।
এই কোটি কোটি টাকা দিয়ে কিন্তু দেশের অনেক উন্নয়ন করা সম্ভব হতো। হিসেবে দেখা গেছে আমাদের পপুলেশনের মাত্র ৩২ শতাংশ মানুষ ট্যাক্স দেয় তাতে কিন্তু আমাদের অনেক কিছু হচ্ছে তাহলে চিন্তা করুন একচুয়ালি অনেক কোটিপতি মানুষ তাদের টাকার উপরে যদি তারা লিগ্যাল টেক্স পরিশোধ করতো তাহলে কত বেশি ভালো হতো।
আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন ধন্যবাদ।