আই-ফোনের দাম এত বেশি কেন?
Technology প্রেমি সব মানুষই জীবনে একবার অ্যাপলের আইফোন ব্যাবহার করতে চাই। কিন্তু সমস্যা হলো এর দাম! অ্যাপলের প্রোডাক্টের দাম এত বেশি কেন হয়? ২০১৬ তে iPhone 7 💰৬৪৯ ডলারে বিক্রি শুরু হয়। তিন বছর পর অ্যাপলের ফ্লাগশিপ iPhone 11 💰৯৯৯ ডলারে বিক্রি হয়। প্রায় ৫৪% পর্যন্ত বেশি! আর এত বেশি মূল্যের বিনিময়ে অ্যাপল মোটা অংকের প্রফিটও পায় এজন্য অ্যাপল আমেরিকার প্রথম "ট্রিলিয়ন ডলার" কোম্পানিতে পরিণত হয়। যার মার্কেট ক্যাপ Switzerland এর জিডিপির থেকেও বেশি।
এক্সপার্টরা মনে করে অ্যাপল গত কয়েকমাস ধরে মার্কেটে যে Reputation তৈরি করেছে তার জন্য তারা কয়েক মিলিয়ন লয়াল কাস্টমারও গেইন করেছে। যারা অ্যাপলের প্রোডাক্ট কেনার জন্য যেকোনো মূল্য দিতে রাজি আছে। এজন্য অ্যাপলের প্রোডাক্টের উপর মানুষ যে বিশ্বাসটা করে সেই বিশ্বাসের দামটা অ্যাপল মার্কেট থেকে চুষে নিচ্ছে এবং প্রত্যেকটা অ্যাপলের প্রোডাক্ট কেনার জন্য তাদের একটা এক্সট্রা প্রিমিয়াম দিতে হচ্ছে। আর এই এক্সট্রা প্রিমিয়ামকে অনেকেই "Apple Tax" বলে থাকে। শুধু মাত্র একটা অ্যাপলের প্রোডাক্ট বলেই এর দামটা বেশি আর এটাই হলো "Apple Tax". তবে এই কথাটাও ঠিক যে টেকনোলজির ক্ষেত্রে অ্যাপল সবসময় এগিয়ে থাকে। অ্যাপলের CEO বলেছেন যে "আমরা কম দামে বেশি প্রোডাক্ট বিক্রি করতে চাই না আমরা চাই মার্কেটের বেস্ট প্রোডাক্টটি বিক্রি করতে"। তাদের ফোনের দাম যেমন বেড়েছে তেমনি তারা ফোনের কোয়ালিটিও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। বেস্ট ক্যামেরা, OLED ডিসপ্লে, বেস্ট প্রসেসর আর এই ব্যাপারটা সবাই জানে অ্যাপলের সফটওয়্যারে হার্ডওয়্যার Utilization সব থেকে ভালো।
তবে অন্যান্য ফোন কোম্পানিও কিন্তু পিছিয়ে নয়। সবাই জানে স্যামসাং বা সনির মত কোম্পানিগুলো অ্যাপলের সাথে Competition করে কিন্তু আশ্চর্যের একটা ব্যাপার হলো সমস্ত আইফোনের ক্যামেরাগুলো সনির সেন্সরগুলোই লাগানো থাকে। এক্সপার্টরা মনে করে অ্যাপল এর ফোনগুলো বানানোর জন্য যে কম্পোনেন্ট গুলো লাগে সেগুলোর টোটাল প্রাইস হয়তো ৫০০ ডলার হতে পারে। কিন্তু সেই ওভারঅল ফোনটা অ্যাপল মার্কেটে প্রায় ১০০০ ডলার বিক্রি করে। যদিও এটাই হওয়া স্বাভাবিক যে বেল্ট মেটেরিয়াল এর থেকে ফোনের দামটাই বেশি হবে কিন্তু তা সত্বেও অন্যান্য কোম্পানির থেকে অ্যাপলের প্রফিট অনেক বেশিই থাকে শুধুমাত্র তাদের অ্যাডভান্স টেকনোলজি আর রেপুটেশন এর জন্য।
এজন্য অনেকেই অ্যাপোলকে একটা টেক কোম্পানি না বলে লাক্সারি কোম্পানি বলতেই পছন্দ করে। আবার অনেক মানুষ অ্যাপল এর পণ্য কিনতে পছন্দ করে অ্যাপল এর লোগোর কারণে। কারণ অ্যাপলের লোগোটাই একটা স্ট্যাটাস সিম্বল ঠিক যেমনটা লাক্সারি ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে হয়।
চলুন এবার জেনে নেয়া যাক যে কোনো একটা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করার যে এক্সপেরিমেন্ট আছে সেটা কি আইফোন ব্যবহার করার এক্সপেরিয়েন্স এর মতোই নাকি কিছুটা পার্থক্য আছে :-
প্রথম যে ব্যাপারটা সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট সেটা হচ্ছে প্রাইভেসি। আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা ফোনের সিকিউরিটি নিয়ে ভাবে না। কিন্তু যারা বুঝে তারা জানে ডাটা কত ইম্পরট্যান্ট। অনেকে ভাবে যদি কোন কোম্পানি ফোন হ্যাক করে বা ফোন থেকে ডাটা চুরি করে অথবা ফোনে ভাইরাস ঢুকে পড়ে তাহলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আজকের দিনে ডাটা একটা বড় কারেন্সির মত। এজন্য অনেকে আইফোনকে প্রেফার করে কারণ এখানে আপনি বেস্ট প্রাইভেসি এবং বেস্ট সিকিউরিটি আপনি পেয়ে যান। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা হল এটা একটা ওপেনসোর্স সফটওয়্যার। কোম্পানি এনড্রয়েড কে নিয়ে মডিফাই করে নিজের ফোনে চালাতে পারে আর আপনি জানতে পারবেন না যে কি মডিফিকেশন তারা করেছে। যেহেতু এন্ড্রয়েড সফটওয়্যার ওপেন সোর্সের সেহেতু হ্যাকাররাও সহজে বুঝতে পারে যে এটা হ্যাক কিভাবে করতে হয়। তবে এন্ড্রয়েড এর মধ্যে স্যামসাং এর সিকিউরিটি একটু বেশি ভালো। মিড রেঞ্জের ফোন গুলোতে স্লো হয়ে যাওয়া এবং ভাইরাস ফাইল তৈরি হওয়া একটা বড় সমস্যা। যেটা আইফোনের সঙ্গে সচরাচর দেখা যায় না।
এর পরে কথা বলা যাক স্টেবিলিটি নিয়ে,
বর্তমানে আপনি অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোন দেখতে পাবেন যেগুলো অনেক ফাস্ট। কিন্তু অ্যাপল আগাগোড়াই সবসময়ই এরকমই ছিল। এর কারণ হলো অ্যাপলের হার্ডওয়ারের রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট টা খুবই ভালো। তারমানে প্রসেসর, RAM, জিপিইউ এই রিসোর্স গুলোকে আইফোনের সফটওয়্যার খুব ভালোভাবে ম্যানেজমেন্ট করতে পারে। এজন্য আইফোনের ব্যাটারি ক্যাপাসিটি এত কম হওয়াতেও অনেক বেটার পারফরম্যান্স দিয়ে থাকে। একটা এনড্রয়েডে 4000 এম্পিয়ার এর ব্যাটারি দিলেও সারাদিন চালাতে পারবেন না। কিন্তু আইফোনের 3200 বা 3500 এম্পিয়ার এর ব্যাটারি দিয়ে সারা দিন চলে যায়।
অ্যাপলের সবচেয়ে বড় একটা অ্যাডভান্টেজ হচ্ছে এরা হার্ডওয়ার এন্ড সফটওয়্যার নিজেরাই ডিজাইন করে। এবং এজন্য এরা হার্ডওয়ারের সফটওয়্যার গুলো খুব ভালোভাবে অপটিমাইজ করতে পারে এবং ফুল ইউটিলাইজ করতে পারে। এপলের আরবও একটা বড় অ্যাডভান্টেজ হল এর ইকোসিস্টেম অন্য কোন প্রোডাক্ট এ এত সুন্দর ইকোসিস্টেম পাওয়া যায় না। যারা অ্যাপ ডিজাইন করে তারা খুব ভাল করেই জানে অ্যাপলের জন্য অ্যাপ ডিজাইন করতে গেলে কত প্যারামিটার এপ্রুভ করাতে হয়। অ্যান্ড্রয়েডের জন্য এই ব্যাপারটা এতটা কঠিন নয়। এজন্য আপনি অ্যাপলের অ্যাপ স্টরে কোন ভুলভাল বা আজেবাজে অ্যাপ খুঁজে পাবেন না।
অবশেষে আমি আপনাদেরকে বলবো আপনার কাছে যদি বেশি টাকা থাকে তাহলে কি আপনি অ্যাপলের আইফোন কিনবেন নাকি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে যে এক্সপেরিয়েন্স পেয়েছেন সেটা নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট থাকবেন। আজ এ পর্যন্তই পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করব অন্য কোন কিছু নিয়ে। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন খুদা হাফেজ।